তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে কম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহার আমাদের জীবন ও অস্তিত্বের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণীর মানুষের বিভিন্ন প্রকার চাহিদা পূরণে প্রয়োজনীয় প্রায় সকল কাজের সুষ্ঠু সমাধান কম্পিউটারের মাধ্যমেই করা হচ্ছে। সভ্যতা বিকাশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাবার সাথে সাথে কম্পিউটার নামক অত্যাধুনিক এই আবিষ্কারটির ব্যবহার উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যক্তিগত জীবন হতে শুরু করে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক সকল ক্ষেত্রে কম্পিউটারের অভূতপূর্ব অবদান অনস্বীকার্য। কম্পিউটারের ব্যবহারের ক্ষেত্র যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি বৃদ্ধি পেয়েছে কম্পিউটার ব্যবহারকারীর সংখ্যা। কম্পিউটারের এই অপ্রতিরোধ্য ব্যবহারের ফলে ব্যবহারকারীর বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। কম্পিউটারের বসার স্থান কিংবা ব্যবহারকারীর আসন বিন্যাসের জন্য শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ বিশেষ করে হাত, ঘাড়, চোখ, মাথা প্রভৃতিতে বিভিন্ন ধরনের অসুখ হতে পারে। স্বাস্থ্যকরভাবে ও পরিবেশ অনুযায়ী আসন ব্যবস্থা না হলে ব্যবহারকারী বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিতে পারে এমনকি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ স্থায়ীভাবে বিকলাঙ্গ হয়ে যেতে পারে। আবার সঠিক আসন ব্যবস্থা দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহারের ফলে অনেকক্ষেত্রে অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। নিম্নে কম্পিউটার ব্যবহারজনিত কয়েকটি শারীরিক সমস্যার কারণ ও সমাধানের উপায় সমূহ আলোচনা করা হলো:
সমস্যা: মাথা ব্যথা
কারন:
১. মনিটরের আকৃতি খুব ছোট হওয়া।
২. মনিটরের কনট্রাস্ট নিম্নমানের বা রিফ্রেশরেট কম হওয়া।
৩. মনিটর ব্যবহারকারীর খুব কাছাকাছি স্থাপন করা।
৪. মনিটরের আলো বা অন্য কোন কিছুর প্রতিফলন হওয়া।
৫. কক্ষের আলো খুব কম বা বেশি হওয়া।
৬. ফ্রন্ট সাইজ খুব ছোট হওয়া।
সমাধান:
মোটামুটি মানের ভাল ব্রান্ডের মনিটর ব্যবহার করা। রুমের আলো যেন ঠিক থাকে তা লক্ষ্য রাখা। ফ্রন্টের সাইজ ঠিক করা।
সমস্যা: চোখ ব্যথা
কারন:
১. মনিটরের খুব কাছে ব্যবহারকারীর আসন স্থাপন করা।
২. দীর্ঘক্ষন ধরে কাজ করা।
৩. মনিটর blinking করা।
৪. চশমা বা কন্ট্রাক্ট লেন্স ব্যবহারকারী চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীরেকেই কম্পিউটার ব্যবহার করা।
৫. কক্ষের আলো খুব কম বা বেশি হওয়া।
৬. মনিটরের কনট্রাস্ট নিম্নমানের বা রিফ্রেশরেট কম হওয়া।
সমাধান:
মনিটরের একটি আদর্শ দূরত্বে রাখা। এর রিফ্রেশরেট এ্যাডজাস্ট করা। চশমা ব্যবহার করলে তা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক ব্যবহার করা।
সমস্যা: ঘাড় এবং কাধঁ ব্যথা
কারন:
১. সঠিক উচ্চতায় মনিটর স্থাপন না করা।
২. ব্যবহারকারীর আসন কম্পিউটার থেকে দূরে হওয়া।
৩. কী-বোর্ডের তুলনায় মাউস অধিক উচ্চতায় রাখা।
৪. সামনের দিকে ঝুঁকে কাজ করা
৫. মাথা কাত করে বা পিছনে হেলান দিয়ে কাজ করা।
৬. ঘাড়ে এবং কানের কাছে টেলিফোন ধরা অবস্থায় কম্পিউটারে কাজ করা।
৭. ডকুমেন্ট নিচে রেখে কাজ করা। মানে কাজ করার সময় বার বার নিচে তাকানো।
সমাধান:
মনিটর এবং মাউস সঠিক(স্বাচ্ছন্দ্যময়) উচ্চতায় রেখে কাজ করতে হবে। কোন ডকুমেন্ট টাইপ করার সময় তা মনিটরের সাথেই রেখে কাজ করতে হবে যাতে নিচে তাকানো না লাগে। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মাথা সোজা রেখে কাজ করতে হবে।
সমস্যা: হাত, কনুই এবং কব্জি ব্যথা
কারন:
১. কী-বোর্ডের অবস্থান সঠিক না হওয়া। কী-বোর্ড অধিক দূরে বা অধিক নিচে বা উচ্চতায় স্থাপন করা।
২. কী-বোর্ড সরাসরি ব্যবহারকারীর সামনে না রেখে একপাশে রাখা বা একপাশ থেকে কাজ করা।
৩. কী-বোর্ডের তুলনায় মাউস অধিক উচ্চতায় রাখা।
৪. কনুইতে ভার দিয়ে কাজ করা।
৫. মাউস, কি-বোর্ড, ক্যলকুলেটর ইত্যাদি বেশি ব্যবহার করা।
৬. কব্জি সঠিক অবস্থানে না থাকা মানে উপরে, নিচে কিংবা একপাশে থাকা।
৭. মাউস সেট-আপ ঠিক না থাকা। অর্থাৎ বামহাতি ব্যবহারকারী ডানহাতের মাউস ব্যবহার করা।
৮. শরীর থেকে হাতের কনুই অধিক দূরত্বে রাখা।
৯. শক্ত বাটনবিশিষ্ট কী-বোর্ড, পয়েন্টিং ডিভাইস বা লাইট পেন ব্যবহার করা কিংবা বিরতিহীন ভাবে কম্পিউটারের টাইপ করা।
১০. হাতের তালুর গোড়ার অংশে চাপ দিয়ে কিংবা টেবিলের প্রান্তে বা কোণায় হাত রেখে কাজ করা।
১১. হিসাব-নিকাশ কাজের জন্য নিউমেরিক প্যাড কী অথবা সংখ্যাবিশিষ্ট পৃথক কী-বোর্ড ব্যবহার না করা।
সমাধান:
সঠিক অবস্থানে কি-বোর্ড রাখা এবং সঠিক ভাবে ব্যবহার করা।
সমস্যা: পিঠ, কোমর এবং পা ব্যথা
কারন:
১. কম্পিউটারের কাজের উপযোগী চেয়ার ব্যবহার না করা।
২. অধিক উচ্চতা সম্পন্ন কিংবা পিছনে সাপোর্ট নেই, এমন চেয়ার ব্যবহার করা।
৩. বিরতিহীনভাবে দীর্ঘক্ষন বসে কাজ করা কিংবা মনিটরের দিকে বেশি ঝুঁকে কাজ করা।
৪. কী-বোর্ডের অবস্থান অধিক দূরে হওয়া কিংবা অধিক নিচে বা উচ্চতায় স্থাপন করা।
৫. ছোট হেলানোবিশিষ্ট চেয়ার কিংবা পিছনের দিকে বেশি হেলানো চেয়ার ব্যবহার করা।
৬. টেলিফোন সেট বা ব্যবহার্য অন্যান্য যন্ত্রপাতি দূরবর্তি স্থানে রাখা।
৭. সিস্টেম ইউনিট ডেস্কের নিচে রাখার ফলে আরাম ভাবে পা রাখতে না পারা।
৮. সিডি রম, ডিস্ক ড্রাইভ, পেন ড্রাইভ প্রভৃতির সুইচ বা সংযোগ পোর্ট হাতের নাগালের মধ্যে না পাওয়া।
সমাধান:
চেয়ার, কী-বোর্ড, মনিটর, মাউস ইত্যাদি সঠিক অবস্থানে রেখে ব্যবহার করতে হবে। যায়গা কম থাকলে সিপিউ অন্যকোথাও রাখতে হবে।
সমস্যা: হাঁটু, গোড়ালি এবং পায়ের পাতা ব্যথা
কারন:
১. অধিক উচ্চতা সম্পন্ন কিংবা কম উচ্চতাসম্পন্ন চেয়ারে বসে কাজ করা।
২. বেশি নরম বা বেশি উচ্চতার গদি বা ফোম যুক্ত চেয়ার ব্যবহার করা।
৩. বিরতিহীন ভাবে দীর্ঘক্ষন বসে কাজ করা
৪. সিস্টেম ইউনিট ডেস্কের নিচে রাখার ফলে আরাম ভাবে পা না রাখতে পারা।
সমাধান:
উপরের সমস্যা দুর করে স্বাচ্ছন্দ্য ভাবে কম্পিউটার ব্যবহার করতে হবে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস